Friday 31 July 2015

নির্বুদ্ধিজীবী



কথ্য ভাষায় দুর্বোধ্য আধুনিক কবিতা বুঝি না, পাবলো পিকাসো বা ভ্যান গঘের ছবি বুঝি না। বার্গম্যান, হিচকক বা আকিরা কুরুসুয়ার সিনেমা বুঝি না, এমনকি আগাথা ক্রিস্টি বা সিডনি সেলডন এর অনুবাদ পড়তে হয়। গনতন্ত্র সমাজতন্ত্রের মন্ত্র বুঝি না, সোশ্যাল মিডিয়ার সামাজিক কোড করা শব্দগুলোর মানে বুঝি না; মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে আমি বুঝিটা কি! আসলে আমি যে কি কি বুঝি না সেটাও হয়তো ঠিকঠাক বুঝি না। মেশিনের শব্দ বুঝি, মাসের শেষের মাইনে বুঝি, আর কলের পুতুলের মতো দিনাতিপাত করি। আমার মতো নাদান হয়তো সবাই নয়, তবু সংবাদমাধ্যম এখনো ইঞ্জিনিয়ারদের বুদ্ধিজীবী বলে গন্য করে নি।

ফেসবুক



ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে এক সময় আমরা ভাবতে থাকি সত্যিই ভালো আছি। আজকাল আবার লুকোনোর জায়গা বা সুযোগ কোনটাই নেই, শুধু প্রকাশ আর প্রকাশ, মনের দুর্ভেদ্য কোণ গুলোতেও স্যাটেলাইট সার্চ। আয়েশ করে অতীতের কষ্ট চর্বণ করার উপায়টুকু নেই! আর তো মনে হয় না ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ বা নব বরষায় হৃদয় নাচে না ময়ূরের মতো। তবে কি ‘বড়’ হলে এম্নিপানা হয়? নাকি বুড়োটে ঘষা কাঁচের ছানি জমছে মনে? এমনি হতচ্ছারা চিন্তা ভাবনা গুলো, যে সেগুলোও ফাটা শিমুল বীজের ছড়ানো তুলোর মতো এদিক ওদিক ছোটে, গুছিয়ে দানাও বাধতে পারে না। অতএব স্নায়ুসুত্র গুলোর উপর চাপ না বাড়িয়ে ভালো থাকার রঙিন চশমা পরেই থাকি... 

ক্যাম্পাসে...



ক্লাসের সাইরেন শব্দে ঘুম ভাঙ্গা চোখে
চেয়ে দেখি গঙ্গার বুকে কমলা রঙের রোদ,
ধীর লয়ে বয়ে চলা জাহাজ মাস্তুল
বিগত রাতের সব অনাসৃষ্টি এদিক ওদিক-
ছড়ানো তাস, পোড়া সিগারেট, উচ্ছিষ্ট চাট
সপ্তাহে একবার ধোয়া জিন্সের প্যান্ট
আর বালিসের নিচে খুজে পাওয়া টিশার্ট,
পড়ি মড়ি ছুট লাগাই ক্লাসের উদ্দেশ্যে
মাথামুণ্ডু হীন সব কঠিন ইকুয়েশান
ফ্যানের ব্লেডের সাথে পাক খেতে খেতে
উড়ে চলে যায় সব আমার অজ্ঞাতে,
খাতার পাতায় তখন আঁকিবুঁকি কাটি
দুপুরের সাইরেন ভাত ঘুম করে মাটি
মেকানিক্স টিচার যেন ঘুম পারানি পিসি
খোলা জানালা পথে গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে
উড়ে আসে এলোমেলো করে দেয়া দখিনা বাতাস
শুনতে পাই সব মহাবৃক্ষের আহবান বানী,
বোটানিক্যাল গার্ডেনে তখন আনমনে ঘুরি
কান পেতে শুনি পাখিদের ডাক, পাতার মর্মরধ্বনি
লাভারস লেনের পানে পিপাসিত পরানে তাকাই
প্রথম যৌবন প্লাবন দিনের সাক্ষী এরাই-
আমার ক্যাম্পাস, হোস্টেলের ঘর, ওভালের ঘাস
আর না বুঝে করা আবেগের ছাত্র রাজনীতি,
এখন হাতরে বেরাই সেই সব স্মৃতি।।

সেই সময়ঃ ২০/০৪/২০১৪



আজকাল আর নেই চারিদিকে অন্ধকারের স্তূপ।
পাড়াগাঁয়ের কোনও আরুনিমাকে সন্ধ্যাপ্রদীপ হাতে
কতওকাল দেখিনি তুলসী মঞ্চে যেতে।
মন ভেসে যায় সেই হিজল গাছের ছায়ায়,
দিঘীর পাড়ে, যেখানে টুপটাপ ঝরে পরে
হিজলের ফল, মাছরাঙার ধ্যান ভঙ্গ করে।
কুয়াসায় ভেজা ধানের পরাগ রেণু মেখে
সাদা বক হয়ে মন যখন উড়তে চায় স্মৃতির আকাশে,
মোবাইলের তীব্র রিংটোন মনডানা ভেঙ্গে
কংক্রিট খাঁচায় এনে পোরে।
প্রতিদিন রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ,
শুধু খুঁজে বেরাই কোনও নগ্ন নির্জন হাত।